বাংলার ঐতিহ্যবাহী চিতল মাছের মুইঠ্যা রেসিপি(Chitol Macher Muithya Recipe In Bengali)

চিতল মাছের নাম শুনলেই জিভে জল আসে। বিশেষ করে "চিতল মাছের মুইঠ্যা রেসিপি"। এই পদটি শুধু সুস্বাদুই নয়, বরং আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথেও জড়িয়ে আছে। চিতল মাছের মাংস আলাদা করে নিয়ে সুস্বাদু ঝোল বা তরকারিতে যখন মুইঠ্যা হিসেবে পরিবেশন করা হয়, তখন তার স্বাদ সত্যিই অনন্য। এই কারণে আজও গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র এই রান্না জনপ্রিয়।

চিতল মাছের মুইঠ্যা রেসিপি সাধারণত উৎসব, পারিবারিক অনুষ্ঠান কিংবা অতিথি আপ্যায়নে তৈরি করা হয়।হাতের তালুতে মুঠো করে ডিম্বাকৃতি বড়া বানানো হয় বলে একে আমরা বলি মুইঠ্যা।

বাংলার ঐতিহ্যবাহী  চিতল মাছের মুইঠ্যা রেসিপি(Chitol Macher Muithya Recipe In Bengali):

বাংলার ঐতিহ্যবাহী  চিতল মাছের মুইঠ্যা রেসিপি

চিতল মাছের শারীরিক বৈশিষ্ট্য:

দেহ: মাছটির দেহ লম্বাটে এবং গভীরভাবে চাপা।
পিঠ ও লেজ: পিঠের অগ্রভাগ ধনুকের মতো বাঁকা ও কুঁজো থাকে. লেজ লম্বা এবং ক্রমান্বয়ে চাপা হয়।
রঙ ও ডোরা: এর দেহ তামাটে বাদামী রঙের. পৃষ্ঠের উভয় পাশে ১৫টি রূপালী ডোরা থাকে।
অন্যান্য: মাথার পেছনে পৃষ্ঠদেশ ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে উপরে উঠে গেছে. লেজের নিচে ৫-৮টি অনিয়মিত কালো ফোঁটা দেখা যায়।

বাংলার ঐতিহ্যবাহী  চিতল মাছের মুইঠ্যা রেসিপি

উপকরণ:

চিতল মাছের মুইঠ্যা রেসিপি বানাতে যা যা লাগবে –

  • চিতল মাছের মাংস – ৫০০ গ্রাম (কিমা করা)
  • সেদ্ধ আলু- ২ টো
  • পেঁয়াজ কুচি – ২টি (বড়ো)
  • পেঁয়াজ বাটা - ২ টি (বড়ো)
  • আদা-রসুন বাটা – ২ টেবিল চামচ
  • হলুদ গুঁড়ো – ১ চা চামচ
  • লঙ্কা গুঁড়ো – ১ চা চামচ
  • কাঁচা লংকা - ৪-৫ টি(বাটা)
  • জিরে গুঁড়ো – ১ চা চামচ
  • ধনে গুঁড়ো – ১ চা চামচ
  • দই - ২ টেবিল চামচ
  • টমেটো – ২টি (কুচি করা)
  • এলাচ - ২-৩ টি
  • লবঙ্গ - ২-৩ টি
  • দারচিনি - ২ টি
  • তেচপাতা - ২ টি
  • গোটা জিরে - ১/২ চা চামচ
  • শুকানো লংকা - ২ টি
  • সরষের তেল – প্রয়োজনমতো
  • গরম মসলা গুঁড়ো – ½ চা চামচ
  • লবণ – স্বাদমতো
  • চিনি - ১/৩ চা চামচ (ঐচ্ছিক)
  • ঘি – ১ চা চামচ


আরও পড়ুন :👉ঝাল ঝাল নোনা ইলিশ ভুনা রেসিপি।

প্রণালী:
১. মুইঠ্যা তৈরি
প্রথমে চিতল মাছের মাংস বাটিতে নিন।তাতে আলু সেদ্ধ, লবণ, হলুদ, কাঁচালঙ্কা বাটা, সামান্য আদা-রসুন বাটা ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে মেখে নিন।মিশ্রণটি থেকে হাতের তালুতে মুঠো করে ডিম্বাকৃতি বল তৈরি করুন।
কড়াইয়ে জল গরম করে প্রথমে বল গুলো ৫ মিনিট সেদ্ধ করে নিন।
এরপর গরম তেলে অল্প ভেজে তুলে রাখুন।

বাংলার ঐতিহ্যবাহী  চিতল মাছের মুইঠ্যা রেসিপি

২. ঝোল তৈরি

কড়াইতে সরষের তেল গরম করে গোটা গরম মশলা, শুকনো লঙ্কা,গোটা জিরে ও তেচপাতা ফোড়ন দিয়ে তাতে পেঁয়াজ বাটা দিন।
পেঁয়াজ সোনালি হলে আদা-রসুন বাটা, টমেটো, হলুদ, লঙ্কা, জিরে ও ধনে গুঁড়ো দিয়ে ভাজুন।
মসলা কষে এলে দই ও চিনি দিন এবং ভালো করে নেড়ে নিন।
প্রয়োজনমতো জল দিয়ে ফোটান।
৩. মুইঠ্যা দেওয়া
যখন ঝোল ফুটতে শুরু করবে, তখন আগে থেকে ভেজে রাখা চিতল মাছের মুইঠ্যা কড়াইতে দিন।
৮-১০ মিনিট ঢেকে রান্না হতে দিন যাতে মুইঠ্যা ঝোলের স্বাদ টেনে নেয়।
শেষে গরম মসলা ও ঘি ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।


আরও পড়ুন :👉বাংলাদেশের সেরা রেসিপি "মেথি কাতলা "

টিপস:

  • মাংস বের করার জন্য গোটা মাছ ভালো করে ধুয়ে মাঝবরাবর কেটে চামচের সাহায্যে মাংস কুরিয়ে নিন।
  • চিতল মাছ আঠালো হওয়ায় মুইঠ্যা বাঁধার জন্য আলাদা করে বেসন বা ময়দার প্রয়োজন নেই।
  • তেলে ভাজার সময় আঁচ মাঝারি রাখলে মুইঠ্যা ভাঙবে না।
  • ঝোল বেশি পাতলা করবেন না, সামান্য ঘন রাখলেই স্বাদ বাড়ে।


চিতল মাছের মুইঠ্যা রেসিপির উপকারিতা:

  • চিতল মাছ প্রোটিনে সমৃদ্ধ, যা শরীরের পেশি ও হাড়কে শক্তিশালী করে।
  • এতে ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম থাকায় দাঁত ও হাড়ের জন্য উপকারী।
  • মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড মস্তিষ্কের জন্য উপকারী।


উপসংহার:

সবমিলিয়ে বলা যায়, চিতল মাছের মুইঠ্যা রেসিপি বাঙালির রান্নাঘরের এক অমূল্য সম্পদ। ঐতিহ্য, স্বাদ ও পুষ্টিগুণ – সবকিছুর মিলন ঘটে এই খাবারে।
বিশেষ অনুষ্ঠান কিংবা দৈনন্দিন খাওয়ায় এই পদ পরিবেশন করলে খাবারের আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে যায়। যারা এখনো চিতল মাছের মুইঠ্যা রান্না করেননি, তারা একবার চেষ্টা করলেই বুঝবেন এর আসল মাহাত্ম্য।

FAQ:
প্রশ্ন: চিতল মাছ ও ফলি মাছের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: চিতল একটি বড় ও চ্যাপ্টা দেহের মাছ, যার শরীর বিচিত্র দাগযুক্ত হয়, অন্যদিকে ফলি মাছ তুলনামূলকভাবে ছোট এবং লম্বাটে হয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
sr7themes.eu.org